সময়ের পার্থক্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন একদিন আগে-পরে হয়, তেমনি অঞ্চল ভেদে রোজার সময়ও কম-বেশি হয়ে থাকে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালন করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা; কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সূর্যদয় ও সূযাস্তের পার্থক্যের কারণে রোজার সময়ও কম বেশি হয়। কোন কোন অঞ্চলে সেটি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি আবার কোন অঞ্চলে অনেক কম।
এ বছর কোন কোন দেশে ২০ ঘণ্টার বেশি আবার কোন দেশে ১১ ঘণ্টারও কম সময় রোজা রাখাতে হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই সবচেয়ে বেশি সময় রোজা পালন করতে হচ্ছে ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ডের মুসলিমদের। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের এই ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এখন সবচেয়ে বড় দিন। ঘড়ির কাটার হিসেবে যা ২০ ঘণ্টা ১৭ মিনিট। দেশটির স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায় সুবহে সাদিক হয়, আর ইফতার অর্থ সূর্যাস্ত হয় পৌনে এগারোটায়। এত দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে সমস্যায় পড়ছেন দেশটির অল্প সংখ্যক মুসলিম নাগরিক। দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা আটশোর মতো।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোজার সময় আইসল্যান্ডের প্রতিবেশী ও ডেনমার্ক শাসিত দ্বীপ গ্রিণল্যান্ডে। দেশটিতে এ বছর রোজার সময় ১৯ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। আর বাল্টিক অঞ্চলের দেশ ফিনল্যান্ড আছে তৃতীয় অবস্থানে, দেশটির মুসলিমরা রোজা রাখছে ১৯ ঘণ্টা ২১ মিনিট। এরপর যথাক্রমে একই অঞ্চলের নরওয়ে(১৯ ঘণ্টা ১৯ মিনিট), সুইডেন (১৯ ঘণ্টা ১২ মিনিট)।
উত্তর মেরুর অন্যান্য দেশগুলোতেও এরকম দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে হচ্ছে মুসলিমদের। অন্যদিকে এই গ্রহের অন্য প্রান্তে অর্থাৎ দক্ষিণ মেরুতে পাওয়া যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দেশ চিলির মুসলিমরা সবচেয়ে কম সময় রোজা রাখছে। দেশটিতে এখন ১০ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট দীর্ঘ হচ্ছে দিন। আইসল্যান্ডের তুলনায় যা প্রায় ১১ ঘণ্টা কম। এছাড়া নিউজিল্যান্ডে রোজা হচ্ছে ১১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট। ব্রাজিল আর অস্ট্রেলিয়ায় হুবহু একই সময় রোজা রাখতে হচ্ছে, ১১ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট।
ইফতার আয়োজনে অনন্য মদিনা
তৌহিদুল ইসলাম
মসজিদে নববীর চত্ত্বরে ইফতারের দৃশ্য
‘তোরা কে কে যাবি আয় সোনার মদিনায়’। মরমি শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের এই কালজয়ী গান প্রত্যেক মুসলিম হৃদয়কে আবেগ তাড়িত করে তোলে। সত্যি তারাইতো সৌভাগ্যবান যারা নবী সা:-এর দেশে নবীর টানে ভ্রমণের সুযোগ পান। আর এই ভ্রমণের সময়টি যদি হয় রমজান মাস তাহলেতো কথাই নেই।
মাহে রমজান। মুসলমানদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মাস। পবিত্র কুরআন নাজিলের এই মাসে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান চান আরো গভীরভাবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিদার লাভ। এ মাসের মধ্য দিয়েই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পথ খুঁজে ফিরেন তারা। তাইতো সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ ছুটে আসেন পবিত্র নগরী মদিনায়।
রমজান মাসকে কেন্দ্র করে মদিনা হয়ে ওঠে উৎসবের নগরী। চারদিকে সাজসাজ রব। শাবান মাসের মধ্য রজনী থেকেই হাওয়া পাল্টে যায় এখানকার। মসজিদে নববীতে চলে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। আবাসিক হোটেল, বিপণিবিতানগুলোতে চলে বিশেষ আয়োজন। সারা বছরই মদিনা শহর ব্যস্ত থাকে ওমরায় আগত মুসলিমদের সমাদরে। সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয় হজের মওসুমে। হজের ক’দিন আগে থেকে পর পর্যন্ত দশ লক্ষাধিক হাজী মদিনাতে থাকেন। এই গণজমায়েতের পর সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয় মাহে রমজানে। বিশ্বের প্রতিটি কোণ থেকে লাখ লাখ মুসলমান শুধু ইবাদতের নিয়তে আসেন শান্তির শহর মদিনায়। এদের একটি বড় অংশ এতেকাফে বসেন মসজিদে নববীতে। অন্যরা দিনরাত মশগুল থাকেন ইবাদতে।
মদিনাতে ইফতার
রমজানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৈনন্দিন অধ্যায় হচ্ছে ইফতার। আর রোজাদারদের আতিথেয়তায় মসজিদে নববীর আয়োজন অনন্য। বলে বুঝানোর উপায় নেই যে, মদিনাতে ইফতারের মধ্য দিয়ে যে উৎসব হয়, পৃথিবীর আর কোথাও এর তুলনা মেলা ভার। এখানে রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্য যে আকুতি তা প্রতিযোগিতায় রূপ নেয়। তবে বলে রাখা ভালো এ প্রতিযোগিতা কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা নয়। রোজাদারদের খেদমতের মাধ্যমে নেকি অর্জনই প্রধান উদ্দেশ্য। সেজন্য এখানকার মানুষ দিল থেকে চেষ্টা করেন দেশী-বিদেশী রোজাদারদের সর্বোচ্চ খেদমতের।
রমজান মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এত মুসল্লি ওমরা করতে আসেন সৌদি আরবে যে, দেশটির সরকার লোক সমাগম নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়েই ভিসা প্রদানে শর্তারোপ করে। আগত মুসল্লিদের অর্ধেকের বেশি মক্কায় ওমরা শেষে মদিনায় চলে আসেন। এখানকার বাসিন্দারা এ ধরনের ওমরাকারী মুসাফিরদের ‘আল্লাহর মেহমান’ বলে থাকেন। আর আল্লাহর মেহমানদের খেদমতে এরা জান দিতে পারেন।