ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম শান্তির প্রতীক। সালামে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সালাম এভাবে দিতে হয়, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।' সালাম মুসলমানদের পরস্পরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ইমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।' (মুসলিম : ৫৪)
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো? রাসুল (সা.) বললেন, 'খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।' (বোখারি : ১২)
সালামের প্রতিটি বাক্যে দশ নেকি। সালামে মোট তিনটি বাক্য আছে। সুতরাং যে পূর্ণ সালাম দেবে তার ত্রিশটি নেকি অর্জন হবে। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম', রাসুল তার উত্তর দিলেন, তারপর সে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'দশ নেকি।' অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এলো। সে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।' রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। পরে ওই ব্যক্তি বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, 'বিশ নেকি।' অতঃপর অন্য একজন এলো। সে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।' রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। সেও বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, 'ত্রিশ নেকি।' (তিরমিজি : ২৬৮৯)
সালামের বিধান ও তার পদ্ধতি : প্রথমে সালাম দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। যদি সালামের দ্বারা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিবে কেফায়া। অর্থাৎ একজন উত্তর দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, তবে সবারই উত্তর দেওয়া উত্তম।
উত্তর দেওয়ার সময় সালামের চেয়ে বাড়িয়ে উত্তর দেওয়া সুন্নাত। যেমন কেউ 'আস্সালামু আলাইকুম' বললে উত্তরে 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বলবে। কেউ 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বললে উত্তরে 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু' বলবে।
চিঠি বা মেসেজ ইত্যাদির শুরুতে সালাম দেওয়া সুন্নাত। এর মৌখিক বা লিখিত উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। (তিরমিজি ২/১০১)
সালামের আদবসমূহ : মানুষের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন, যাতে তা মুসলমানদের প্রতীকে পরিণত হয়। বিশেষ কোনো দলকে সালাম দেওয়া বা শুধু বড়দের দেওয়া কিংবা ছোটদের না দেওয়া উচিত নয়। অনুরূপভাবে অপরিচিতকে বাদ দিয়ে শুধু পরিচিতকে সালাম দেওয়াও কাম্য নয়। (বুখারি : ১২)
উত্তম হলো- ছোট বড়কে প্রথমে সালাম দেবে। পথচারী উপবিষ্টকে সালাম দেবে। আরোহণকারী পথচারীকে সালাম দেবে। কম লোক বেশি লোককে সালাম দেবে। (বুখারি : ৬২৩১)
উচ্চ স্বরে সালাম দেওয়া ও উত্তর দেওয়া সুন্নাত। কেননা সালাম উচ্চারণ করতে হয়। হাত বা মাথার ইশারা ইত্যাদি সালাম বলে বিবেচিত হবে না। হ্যাঁ, দূরে হলে বা উত্তর শুনতে কোনো কিছু বাধা হলে মুখে উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে হাত বা মাথার ইশারায় উত্তর দেওয়ার কথা জানিয়ে দেবে। কাছে হলে সালামে হাত ওঠানো অপ্রয়োজনীয় ও সুন্নাতের খেলাফ। (তিরমিজি ২/৯৯)
সুন্নাত হলো দুজন আলাদা হওয়ার পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার সালাম দেওয়া। সাহাবায়ে কেরাম যখন হাঁটতেন, তখন তাঁদের সামনে কোনো গাছ অথবা স্তূপ পড়ত, তাঁরা ডানে-বাঁয়ে আলাদা হয়ে যেতেন। অতঃপর আবার সাক্ষাৎ হলে একে অন্যকে সালাম দিতেন।
সালাম শুধু মুমিনদের অভিবাদন, কাফেরদের সালাম দেওয়া বৈধ নয়। হ্যাঁ, যদি এমন জায়গায় উপস্থিত হয় যেখানে কাফের-মুসলমান একত্রে থাকে, সেখানে সালাম দেওয়ার সময় মুসলমানের নিয়ত করবে। (সুনানে আবি দাউদ : ৫২০৫) যদি কোনো অমুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার জবাবে 'আস্সালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা' বলবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২৪৩০৪) কিংবা 'ওয়ালাইকা' বা ওয়ালাইকুম' বলবে। অমুসলিমদের বিশেষ প্রয়োজনে সালাম ছাড়া অন্য কোনোভাবে অভিবাদন জানানো বৈধ। যেমন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি ইত্যাদি।
তবে এমন বাক্য ব্যবহার করা যাবে না, যা অন্য ধর্মের জন্য নির্ধারিত। অন্যের মাধ্যমে কারো কাছে সালাম পৌঁছানোও সুন্নাত। যার কাছে সালাম পৌঁছানো হবে উত্তর দেওয়া তার দায়িত্ব। (তিরমিজি ২/৯৯)
মাহরাম (যাদের দেখা বৈধ) নারীদের বা স্ত্রীদেরও সালাম দেওয়া সুন্নাত। আর ফেতনা থেকে নিরাপদ হলে পরনারীদেরও সালাম দেওয়া জায়েজ। অনুরূপ নারীরাও পরপুরুষদের ফেতনার আশঙ্কা না হলে সালাম দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯)
কাউকে ঝুঁকে সালাম দেওয়া জায়েজ নেই। (তিরমিজি : ২৭২৮)
যেসব অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ : যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিতে অক্ষম তাকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। যথা : নামাজ, আজান-ইকামত, জিকির, তিলাওয়াত, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা, খানাপিনা ও ইস্তিঞ্জারত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ। (রদ্দুল মুহতার ১/৪১৪)