"'বঙ্গবাণী' ও 'কপোতাক্ষ নদ' উভয় কবিতাতেই মাতৃভাষা প্রীতির মাধ্যমে দেশ প্রেম প্রকাশ পেয়েছে।" - মন্তব্যটি সম্পূর্ণরূপে যথার্থ। কারণ-
'বঙ্গবাণী' কবিতায় দেখা যায় যে, মধ্যযুগীয় সময় আল্লাহ ও মহানবী (স) এর স্তুতি করার ভাষারীতি নিয়ে একদল গোঁড়া মুসলমান ভিন্ন মত পোষণ করে। তাদের মতে আরবি-ফারসি ভাষা ব্যতীত অন্য যেকোনো ভাষা অপবিত্র। তাই শুধুমাত্র আরবি-ফারসি ভাষায় এই ধর্ম চর্চা করতে হবে। তখন কবি আবদুল হাকিম তীব্র ক্ষোভের বলিষ্ঠ কণ্ঠে ব্যক্ত করেন যে সৃষ্টিকর্তা সকল ভাষায় বুঝতে সক্ষম। তাই মাতৃভাষাতেই মরমী সাধনা করা উচিত। আর উপলব্ধি ব্যতীত মরমী সাধনা অর্থহীন। আর উপলব্ধি করার জন্য সব চেয়ে শ্রেয় হলো নিজ মাতৃভাষা। এছাড়াও তৎকালীন কিছু শিকড়হীন পরগাছা স্বভাবের লোকদের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা এবং বিদেশি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুরাগ দেখতে পেয়ে তাদের জন্ম পরিচয় সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এমনকি তিনি তাদেরকে স্বদেশ ত্যাগ করার জন্য বলতেও দ্বিধা বোধ করেননি। তাঁর এই প্রতিবাদ মুখর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাঁর মাতৃভাষার প্রতি গভীর প্রীতির প্রকাশ ঘটেছে যার অন্তরালে লুকিয়ে আছে দেশপ্রেম।
'কপোতাক্ষ নদ' কবিতায় দেখা যায় যে, প্রবাস থেকে দেশের টানে স্বদেশে ফিরে আসবার সাধ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মনে জাগলেও সেই সাধ্য তার নেই। কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী লোকজন কবিকে ভুলে না গিয়ে যদি তাকে বন্ধুত্বের রীতি অনুযায়ী স্মরণে রাখেন তাহলে কবির জীবন ধন্য হবে- এমনটাই তিনি প্রত্যাশা করেন। কবি নামেমাত্র প্রবাসে অবস্থান করেন, কিন্তু মাতৃভাষা বাংলায় গান গেয়ে বা কবিতা লিখে স্বদেশের গুণকীর্তন করেন। কবির এমন অনুভূতি মাতৃভাষাপ্রীতি ও দেশপ্রেম সত্তার পরিচয় দেয়।