নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা। জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ের সকল নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা তৈরি, ভোটগ্রহণ তত্ত্বাবধান, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এবং নির্বাচনী অভিযোগ-মোকদ্দমা মীমাংসার লক্ষ্যে নির্বাচনী ট্রাইবুনাল গঠন করা নির্বাচন কমিশনের কাজ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশনের গঠন-কাঠামো, ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্ধারণ করা আছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮ এর আওতায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন স্থাপনের বিধান প্রণীত হয়েছে এবং এতে বলা হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে এবং রাষ্ট্রপতি সময়ে সময়ে যেরূপ নির্দেশ করবেন সেরূপ সংখ্যক অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগনকে নিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগদান করবেন। একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর সভাপতি রূপে কাজ করবেন। সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তাঁর কার্যভার গ্রহনের তারিখ হতে পাঁচ বছর কাল হবে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এমন কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন না। অন্য কোনো নির্বাচন কমিশনার অনুরূপ পদে কর্মাবসানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার রূপে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন, তবে অন্য কোনোভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ তিন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(৪), অনুচ্ছেদ ১২৬ এবং গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৪ এ নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা এবং দায়িত্ব বর্ণিত হয়েছে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ বলে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবে এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবে। নির্বাচন কমিশনের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কতর্ব্য পালনে প্রয়োজনে কমিশন এর সভাপতিকে বা এর যেকোন সদস্যকে বা এর কোনো কর্মচারীকে আইনের অধীনে থেকে কমিশনের পক্ষে ক্ষমতা অনুশীলনের অনুমতি প্রদান করতে পারবে। অনুচ্ছেদ ১২৬ এবং গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৪ ও ৫ এর ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারী প্রয়োজন হবে, নির্বাচনের কাজে সহায়তার লক্ষ্যে সেরূপ কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাধীন সংস্থা হিসেবে নির্বাচন কমিশন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, সংসদ ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে সাংবিধানিকভাবে শপথের দ্বারা দায়বদ্ধ।
নির্বাচন কমিশন সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক ও যোগাযোগ রক্ষা করে। নির্বাচনী তফসিল, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের সামগ্রিক আয়োজনের ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভোটার নিবন্ধন, ভোটার তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়েও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলাপ আলোচনা করে।