পদ্মা সেতু
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর একটি হলো পদ্মা নদী। পদ্মার দুই প্রান্তে লোকালয় আর মাঝখানে উত্তাল পানি। কিন্তু এই পানি দুই প্রান্তের লোকালয়ের মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি বড় বাধা। পূর্বে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ফেরির মাধ্যমে এই নদী দিয়ে যাতায়াত করতেন। এটি ছিল মানুষের জন্য এক চরম দুর্ভোগ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হতো। তাই কষ্ট লাঘবের জন্য বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেন যা পদ্মা 'বহুমুখী পদ্মা সেতু' নামে পরিচিত। পদ্মা সেতু শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জে মিশেছে। এই সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটিয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গৃহীত সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। ২৩শে জুন ২০২১ নির্মাণকাজ শেষ হলে পদ্মা হয়ে ওঠে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০মিটার এই সেতুটি একটি দ্বিতল সেতু। সেতুর উপরে রাস্তা দিয়ে চলবে যানবাহন এবং নিচের রাস্তা দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুটি নির্মিত হয়েছে কনক্রিট এবং স্টিল দিয়ে। সেতুর দুই পাশে আছে ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনের এসোসিয়েটস সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকি করেছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। মূল সেতুর পিলার ৪২টি। এর মধ্যে নদীর মধ্যে ৪০টি নদীর ভিতরে ও নদীর দুই পাশে দুইটি পিলার। নদীর ভেতরের চল্লিশটি পিলারে ৬টি করে মোট ২৪০টি পাইল। এছাড়া সংযোগ সেতুর দুই পাশের দুইটি পিলারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল রয়েছে। পিলারের উপর ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। মূল সেতুর কাজ পেয়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এই সেতুর স্থায়িত্বকাল আনুমানিক 100 বছর। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি স্বপ্ন ছিল যা গত ২৫শে জুন, ২০২২ তারিখে বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। করোনা মহামারীর কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণের অগ্রগতি কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল। ১ জুন, ২০২১ পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের ও রেলপথের স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হয়েছিল যথাক্রমে ৮৯শতাংশ এবং ৯৫শতাংশ। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৫শে জুন, ২০২১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত থেকে টোল প্রদান করে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে আরোহন করেন। এই সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। এই সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে ব্যাপক শিল্প-কারখানা, গার্মেন্টস, গোডাউন প্রভৃতি। ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি। নানা অনিশ্চয়তাকে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার এই সুবিশাল প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছেন। আশা করা যায় যে, এই সেতু আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের সহায়ক হয়ে অচিরেই বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি এবং উন্নত করবে মানুষের জীবনযাত্রা।