নাগরিক সম্পর্কে জানার পূর্বে রাষ্ট্র সম্পর্কে জানা জরূরী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন-
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটলের (Aristotle) মতে, “কতিপয় পরিবার ও গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনই রাষ্ট্র।” প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন (Woodraw Wilson) বলেন, “রাষ্ট্র হল আইনানুসারে সংগঠিত নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের একটি জনসমষ্টি।” রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা দিয়েছেন অধ্যাপক গার্নার (Garner)। তাঁর মতে, “রাষ্ট্র হল বহুসংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত এমন এক জনসমাজ, যা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত এবং যাদের একটি সুসংগঠিত সরকার আছে, যার প্রতি ঐ জনসমাজ স্বভাবতই অনুগত।”
রাষ্ট্রের এসব সংজ্ঞা থেকে বলা যায়, যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সংগঠিত সরকার, জনসমষ্টি এবং সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে, তাকে রাষ্ট্র বলে।
আর যে ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে, রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগ করে ও রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালন করে, তাকে ওই রাষ্ট্রের নাগরিক বলে।
নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
রাষ্ট্র যেমন নাগরিকদের বিবিধ সুযোগ-সুবিধা এবং অধিকার দিয়ে থাকে তেমনি রাষ্ট্রের প্রতিও নাগরিকদের কতগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর নির্ভরশীল ও পরিপূরক। তাই দেশের যেকোনো সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিকদের এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। কেননা রাষ্ট্র হয়তো কিছু নীতিমালা জারি করতে পারে। কিন্তু নাগরিকরা যদি তা অমান্য করে তাহলে সে সমস্যার সমাধান হবে না। নাগরিক যদি রাষ্ট্রের নীতিমালাগুলো মেনে চলে রাষ্ট্রকে সাহায্য করে, তাহলে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়।
আমরা জানি, বর্তমান সময়ের অতিমারি কোভিড-১৯ সব জায়গায় একটি আতংকের নাম। দুর্যোগের এই সময়টি রাষ্ট্র ও নাগরিকদের একসাথে এর মোকাবেলা করা অত্যাবশ্যক। যেকোনো মহামারী বা দুর্যোগে সরকার ও রাষ্ট্রের যেমন কিছু করণীয় রয়েছে, তেমনি সুনাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
১) প্রথমত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাষ্ট্রের যে কোন দুর্যোগ/সমস্যা বা মহামারীতে নাগরিকের দায়িত্ব হলো নিজে আতঙ্কিত না হওয়া এবং অন্যদের আতঙ্কিত না করা। আর পাশাপাশি নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যকে সচেতন করা।
২) রাষ্ট্রকর্তৃক বিধিনিষেধ মেনে চলা এবং অন্যকে মেনে চলতে উৎসাহী করা।
৩) সমস্যার মােকাবিলায় রাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলো সম্পাদনে যথাসাধ্য সহায়তা করা।
৪) মহামারীতে আক্রান্ত হলে যথাযথভাবে চিকিৎসা নেওয়া।
৫) পরিষ্কার পরিছন্নতা, নিজের ও পরিবারের যত্ন নেওয়া, সঠিক নিয়মে সরকারি সায্য নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া।
৬) এই রকম পরিস্থিতিতে গুজবে কান না দেওয়া এবং গুজব ছড়ানাে থেকে বিরত থাকা। একমাত্র সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সংবাদে বিশ্বাস রাখা।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপ এবং নির্দেশ
১. স্বাস্থ্য সেবা: সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষা সহজ ও দ্রুত করতে সরকার পরীক্ষাকেন্দ্র বৃদ্ধির কাজ করছে। বর্তমানে দেশের ৬৮ টি স্থানে ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর জন্য অ্যালকোহল, টেস্ট কিট, টেস্ট ইনস্ট্রমেন্ট, জীবানুনাশক, মাস্ক প্রটেক্টিভ গিয়ারসহ মোট ১৭ ধরনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও কর অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছে রাজস্ব বোর্ড (NBR)।
২. আর্থিক সহায়তা: দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্নসংস্থার অসুবিধা নিরসনের জন্য যোগযোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা প্রদান করা জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা ইত্যাদি।
৩. অনলাইন পাঠ দান : শত প্রতিকুল পরিস্তির মধ্যেও শিক্ষার্থীদের পাঠকার্যক্রম অব্যহত রয়েছে রাষ্ট্রের নাগরিকের প্রতি দায়িত্বশীলতার জন্য । সুষ্ঠ পাঠদানের জন্য নিয়োগ করাহয়েছে কর্তব্যশীল শিক্ষক দের
৪. লকডাউন কার্যক্রম: এ দেশে রোগী সনাক্ত হচ্ছে ঠিক তার পরপরই সরকার ও পুরোদেশের লোকজন লকডাউন চালু করেছে। অর্থাৎ জনসাধারণ প্রয়োজন ছাড়া ঘরবাড়ি থেকে বের না হওয়া এবং অতীব প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন কাঁচাবাজার, খাবার ঔষধের দোকান, হাসপাতাল এবং জরুরী যেসব সেবা আছে তা বিকাল পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ জারি করেছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নাগরিক এর ভূমিকা
১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গণবিজ্ঞপ্তিতে নাগরিকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে কিছু প্রবাসী বা তাদের সংস্পর্শে যারা আসছেন, তারা কোয়ারেন্টাইন এর শর্ত সঠিকভাবে মানছেন না। অনেকেই মিথ্যা ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
২.সকল স্থল এবং বিমানবন্দর স্ক্রিনিং হচ্ছে। তবে বিদেশ থেকে আসা কেউ কেউ স্ক্রিনিং ছাড়াই দেশে ঢুকে যাচ্ছেন। এলাকায় গিয়ে ঘুরছেন। লোকজন আবার সেই কথা জেনে পুলিশে খবর দিচ্ছে। আর শুধুমাত্র শাহজালাল বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং এর জন্য থার্মাল স্ক্যানার থাকলেও তা এখন নষ্ট ।
রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিকদের সমানভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত। কেননা করােনার বিষয়টি শুধু রাষ্ট্রের নয়; নাগরিকদের অবহেলার কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে করােনার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ বহুসংখ্যক করােনার ভ্যাকসিন আমদানি করেছে, তবুও বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এই করােনার জন্য সতর্ক থাকা উচিত। অন্যথায়, বাংলাদেশের সব দিক থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।